আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারণা [Concept of International Relations] - old WB ANSWER

All questions answer .West Bengal job latest GK

আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারণা [Concept of International Relations]

আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারণা [Concept of International Relations]
সমাজবিজ্ঞান (Social Science)-পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। সমাজের অগ্রগতি সাধিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিকের মধ্যে জটিলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে দর্শন, ইতিহাস, অর্থবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাজনৈতিক সমাজবিদ্যা প্রভৃতি শাস্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। এইসব শাস্ত্রের সমষ্টিকেই বলা হয় সমাজবিজ্ঞান বা সােশ্যাল সায়েন্স। আন্তর্জাতিক রাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রথমদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে গড়ে তােলার প্রচেষ্টা শুরু হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে তা একটি পঠনপাঠন ও গবেষণাযােগ্য বিষয় হিসেবে, অর্থাৎ একটি পৃথক শাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করতে সমর্থ হয়েছে বলে অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
       বর্তমানে কোনাে রাষ্ট্রই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই তার পক্ষে এককভাবে জনসাধারণের কল্যাণসাধন কিংবা শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এরূপ উপলদ্ধিই প্রতিটি রাষ্ট্রকে নিজের জাতীয় স্বার্থরক্ষার প্রয়ােজনে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করে। আর সেজন্যই প্রতিটি রাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তােলে। তা ছাড়া, জ্ঞান- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবনীয় উন্নতির ফলে অতি অল্প সময়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গমনাগমন কিংবা তার সঙ্গে সংযােগ স্থাপন সম্ভব হয়েছে। আবার, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বরাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সুতীব্র প্রতিযােগিতার সূত্রপাত ঘটেছে। বলা বাহুল্য, তা করতে গিয়ে রাষ্ট্রগুলি জোট গঠন করে নিজেদের শক্তিকে সুসংহত করার কাজে মনােনিবেশ করেছে। বিশেষত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ১৮২৩ সাল থেকে অনসত মনরাে নীতি অনুযায়ী নিজেকে বিশ্বরাজনীতির অঙ্গন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করে একমাত্র আণবিক শক্তির অধিকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তা ছাড়া, ওই রাষ্ট্রটি তদানীন্তন বিশ্বের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব-প্রতিপত্তি রােধ করার জন্য ন্যাটো (NATO'North Atlantic Treaty Organisation'), সেন্টো (CENTO' Central Treaty Organisation), সিয়াটো ’ (SEATO’ South East Asia Treaty Organisation) প্রভৃতি আঞ্চলিক শক্তিজোট গড়ে তুলেছিল। অন্যদিকে, আত্মরক্ষার প্রয়ােজনে সােভিয়েত ইউনিয়নও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পাদন করেছিল ‘ওয়ারশ চুক্তি’ ('Warsaw Pact')। এইভাবে বিশ্বরাজনীতির মঞ্চ ক্ষমতার রাজনীতি-মঞ্চে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা প্রভৃতি রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ ওই দুটি শক্তিজোটে যােগদান না ক'রে যে-আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা ‘জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন’  ('Non-aligned Movement') নামে পরিচিত।
        আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কেবল পূর্বোক্ত রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের’ (State Actors') নিয়ে আলােচনা ও বিশ্লেষণ করে না, সেই সঙ্গে ‘অরাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের’ (Non-state Actors') নিয়েও আলােচনা করে। জাতিসংঘ (League of Nations), সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ, অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘ (United Nations), আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ, (Regional Organisations), সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট (Military and Economic Union), বহুজাতিক সংস্থা (Multinational Organisation), রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রমকারী নিগম (Transnational Corporation), ব্যক্তি (individual) প্রভৃতি হল ‘অরাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উদাহরণ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এদের ক্রিয়াকলাপ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের ভূমিকা পূর্বাপেক্ষা অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে বলে হফমান (Hoffman), মােরস (Morse), কুপার (Cooper), ব্রাউন (Brown) প্রমুখ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা মনে করেন। আবার, হলসটি (Holsti) বলেছেন যে, জাতীয় রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতা, সার্বভৌমিকতা ও ভূখণ্ডগত বৈশিষ্টের

যথেষ্ট গুরুত্ব সত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ওইসব রাষ্ট্রের কর্মক্ষেপের পরিধির মধ্যে বহিঃশক্তির অনুপ্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। কেলম্যান (Kelman)-এর মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণে জাতীয় রাষ্টসমতা এখনও প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলেও ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। বিশ্বব্যাপী এইসব গঠিত। সম্পর্কে উদাসীন থাকলে আমাদের কূপমণ্ডুকতা দোষে দুষ্ট বলে চিহ্নিত করা হবে। সর্বোপরি, বিশ্বায়নের যুগে আমাদের দৃষ্টিকে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত করতে না-পারলে একটি রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যােগ্যতা আমার হারিয়ে ফেলব। বলা বাহুল্য, বিশ্বরাজনীতির পূর্বোক্ত মৌলিক পরিবর্তনসমূহ এবং জটিলতা সম্পর্কে সম্যকভাবে
অবহিত হতে গেলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নামক বিষয়টির ওপর আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে নির্ভর করতে হবে।
  ⧬  আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন সংজ্ঞা (Various Definitions of International Relations)
বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি পৃথক শাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করলেও তার কোনাে সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে স্ট্যানলি হফম্যান (Stanley Hoffmann) বলেছেন যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতাে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক সংজ্ঞাকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই আলােচ্য বিষয় হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এখনও সুষ্ঠু ও সুঠাম রূপ পরিগ্রহ করতে পারেনি। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞা নির্ধারণের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল—আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে অনেক সময় বিশ্ব রাজনীতি’ ('World Politics') ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি (International Politics')র সমার্থক বলে মনে করা হয়। এফ. এস. ডান (E. S. Dunn) জাতীয় সীমানার বাইরে প্রকৃত সম্পর্ক (actual relation) বা এরূপ সম্পর্ক বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গড়ে ওঠা
জ্ঞানের সমষ্টি (body of knowledge')-কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলে চিহ্নিত করেছেন। হার্টম্যান (Hartman)-এর মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয়, যা বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রক্রিয়া নিয়ে আলােচনা করে। কিন্তু কুইনসি রাইট (Quincy Wright) এরূপ সংজ্ঞাকে সংকীর্ণত দোষে দুষ্ট বলে মনে করেন। তাঁর মতে, অনিশ্চিত সার্বভৌমিকতার অধিকারী সংগঠনগুলি’ (entities of uncertain sovereignty')-কে নিয়ে যে-শাস্ত্র আলােচনা করে, তাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলে। “বিভিন্ন রাষ্ট্রের অন্তর্গত ব্যক্তিবর্গের সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলােচনা করে” বলে নিকোলাস স্পাইকম্যান (Nicholas Spykman) অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হফম্যান একটি কার্যকরী ও কিছুটা সংকীর্ণতামুক্ত সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তার মতে, বিশ্ব যেসব মূল এককে বিভক্ত, তাদের বহির্বিষয়ক নীতি ও শক্তিকে প্রভাবিত করতে সক্ষম উপাদানসমূহ ও কার্যাবলি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলােচনা করে। পামার ও পারকিনস্ (Palmer and Perkins) বলেছেন, বিশ্বের সব মানুষ ও গােষ্ঠীর যাবতীয় সম্পর্ক, মনুষ্যজীবন, তাদের কার্যকলাপ ও চিন্তার প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি, চাপ ও প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলােচনা করে থাকে। তারা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বিষয়গুলিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কে. জে. হলসটি (K.J. Holsti)র মতে, সাধারণভাবে নিয়মিত প্রক্রিয়া অনুসারে পরস্পরের ওপর ক্রিয়াশীল স্বাধীন রাজনৈতিক শর্তাবলিকে নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার পর্যালােচনাকেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলে। জন। হাউস্টন (John Houston) বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয়, যা আন্তর্জাতিক সম্মেলন। কূটনীতিবিদদের গমনাগমন, চুক্তি সম্পাদন, সৈন্যবাহিনী নিয়ােগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অবাধ প্রসার-সহ বহু ৩ বিচিত্র বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। বিভিন্ন মানবগােষ্ঠীর ভাবধারা ও মতাদর্শও এইসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।

   ⧬  অন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাধারণ সংজ্ঞা (General Definition of International Relations)
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি সাধারণ সংজ্ঞা নির্দেশ করা যেতে পারে: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয়, যা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, অরাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতা,  রাজনৈতিক মতাদর্শ, যুদ্ধ ও শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ, আন্তর্জাতিক সংগঠন, স্বার্থগােষ্ঠী, জনমত, প্রচার, কুটনীতি, বিশ্ববাণিজ্য, সন্ত্রাসবাদ, বিশ্ব-পরিবেশ প্রভৃতির মতাে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলােচনা করে।

1 comment:

  1. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু জানার ছিল। ধন্যবাদ সঠিক উত্তর গুলো দেওয়ার জন্য। হেপ্লফুল পোস্ট বটে।

    ReplyDelete